আপনি জানেন কী, কতমাত্রার ভুমিকম্পেএলে আপনার আশপাশ ধংস হয়ে যেতে পারে….



     সাম্প্রতিক  সময়গুলিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহ বাংলাদেশ ও এর আশে পাশের দেশ যেমনপাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল , ভারত মায়ানমার এ ছোট বড় বেশ কয়েকটি ভুমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ জনমনে বেশ ভীতির সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশে পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি ভুমিকম্পের কারনে এটা স্পষ্ট যে আমরা আজ চরম ঝুকির মধ্যে রয়েছি। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা আরও দুটি ভয়ঙ্কর ভুমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছেন যাতে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
         যখন বিশ্বের কোন স্থানে কোন ভুমিকম্প আঘাত হানে তখন আমরা সংবাদ মাধ্যমের বদৌলতে ভুমিকম্পের মাত্রা কত ছিল তা জানতে পারি । কিন্তু আমারা সকলেই কি এটা জানি বা বুঝি   একটা ৫ মাত্রার ভুমিকম্পের চেয়ে একটা ৬ মাত্রার ভুমিকম্প কতটা শক্তিশালী বা কোন ভুমিকম্পকে মাঝারি মানের আর কোনটাকে তীব্রমাত্রার ভুমিকম্প বলে ? আপাত দৃষ্টিতে এটা মনে হতেই পারে যে একটা ৫ মাত্রার একটা ৬ মাত্রার ভুমিকম্পের তীব্রতার পার্থক্য বুঝি খুব বেশি নয়। কিন্তু আসলোই কি তাই। সংবাদ মাধ্যম হতে আমরা যা শুনি শুধু সেটাই একজন অপরজনকে বলি, কিন্ত তার ভয়বহতা উপলব্ধি করতে পারি কতজন। রর্তমান সময়ে এ বিষয়টি জানা ভীষন জরুরী , নয়ত আখেরে পস্তাতে হবে। আসুন এটা জানার চেষ্টা করি ।

          ভূমিকম্প বা ভূকম্পনঃ   ভূ মানে পৃথিবী আর কম্পন হলো কাঁপা; সোজাভাবে ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর কেঁপে ওঠা। তার মানে পৃথিবী যখন কাঁপে তখন আমরা তাকে ভূমিকম্প বলি।
পৃথিবীতে বছরে গড়ে কত ভূমিকম্প হয়, শুনলে কপালে উঠতে পারে চোখ। বছরে গড়ে ছয় হাজার ভূমিকম্প হয়। তবে এগুলোর অধিকাংশই মৃদু যেগুলো আমরা টের পাই না। সাধারণত তিন ধরনের ভূমিকম্প হয়ে থাকে- প্রচণ্ড, মাঝারি মৃদু।

আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- অগভীর, মধ্যবর্তী গভীর ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ভূপৃষ্ঠের
১।   ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর,
২।  ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং
৩।  ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে গভীর ভূমিকম্প বলে।
যে যন্ত্রের সাহায্যে ভুমিকম্পের তীব্রতা মাপা হয় তার নাম সিসমোগ্রাফ। সিসমোগ্রাফ আবিষ্কারের আগে মানুষ শুধু ভুমিকম্পের অস্তিত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারত কিন্তু কোন মাত্রায় হলো, বলা সম্ভব ছিল না। ভূমিকম্প মাপা হয় দুইভাবে- তীব্রতা এবং প্রচণ্ডতা বা ব্যাপকতা। ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা হয় রিখটার স্কেলে।
১। ৫ - .৯৯ মাঝারি
২। ৬ - .৯৯ তীব্র
৩। ৭ - .৯৯ ভয়াবহ
৪। ৮ - এর ওপর অত্যন্ত ভয়াবহ
,    ভূমিকম্প মাপার জন্য অনেকগুলো স্কেল রয়েছে তবে,আমাদের সবার কাছে পরিচিত হলো রিখটার স্কেল | রিখটার স্কেল মাপার পদ্ধতির জন্য ১০ বেসড লগারিদম ব্যবহার করা হয় | আর এটা মাপা হয় মাইক্রোমিটারে | এই যেমন - কোনো ভূমিকম্পে মাটির কম্পন যদি হয় মিটার তাহলে প্রথমে তাকে মাইক্রোমিটারে কনভার্ট করব এরপরে তার লগারিদম বের করব | সে হিসেবে দাড়ায়   log ১০^= রিখটার স্কেল !
     আরেকটা বিষয় ভূমিকম্পের প্রতিটা স্কেল আগেরটার চেয়ে ১০ গুন শক্তিশালী থাকে যেমন রিখটার স্কেল এর থেকে দশ (১০) গুন বিধংসী !! সেরুপ ৫ মাত্রার চেয়ে ৬ মাত্রা ১০ গুন বেশি বিধংসী। তাহলে ৪ মাত্রার চেয়ে ৬ মাত্রা ১০*১০=১০০ গুন বেশি বিধংসী, ভাবতে পারেন। আর ভূমিকম্প যেহেতু সৃষ্টি হয় কিছু শক্তির বিচ্ছুরণের ফলে সেই শক্তির ক্ষেত্রে প্রতি স্কেলে বৃদ্ধিতে এটা  প্রায় ৩২ গুন বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ এ ৪ মাত্রার ভুমিকম্পের চেয়ে একটা ৫ মাত্রার ভুমিকম্প ৩২ গুন বেশি শক্তি বিচ্ছুরন করে, তাহলে ৬ মাত্রা ৪ মাত্রা চেয়ে কতগুন বেশি শক্তি বিচ্ছুরন করবে ? ৩২*৩২=১০২৪ গুন, ভাবা যায়। এখন নিশ্চই আমরা এটা বুঝতে পারছি আপাত দৃষ্টিতে আমার দুটি পাশাপাশি মাত্রার ভুমিকম্প সম্পর্কে আমরা যা ভাবি এটা তার চেয়েও কত গুন কম বা বেশি শক্তি শালি হয়।

রিখটার স্কেল কী ?
ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপতে রিখটার স্কেল ব্যবহার করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ১৯৩৫ সালে চার্লস ফ্রান্সিস রিখটার এবং বেনো গুটেনবার্গ ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপতে এই স্কেলের ব্যবহার শুরু করেন। এই স্কেলে ভূমিকম্প থেকে নির্গত শক্তির পরিমাণ মাপা হয়। তবে ১৯৭০ সাল থেকে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপতে মোমেন্ট ম্যাগনিচিউড স্কেল (এমএমএস)-এর ব্যবহারও শুরু হয়। এই স্কেলের প্রথম ব্যবহার করেইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে এমএমএস ব্যবহার করা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে রিখটার স্কেলের জনপ্রিয়তাই বেশি।

রিখটার স্কেল আসলে লগ স্কেল। এই হিসেবে কোনও ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট তরঙ্গগুলির মধ্যে রেকর্ড করা সবচেয়ে বেশি অ্যামপ্লিচিউড-এর (উচ্চতা), ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে সিসমোগ্রাফ (ভূমিকম্প মাপার যন্ত্র) যন্ত্রের গড় দূরত্ব ইত্যাদি ব্যবহার করে ভূমিকম্প থেকে নির্গত শক্তির পরিমাপ করা হয়। এই স্কেলের লগের বেস ১০ ধরা হয়। ফলে রিখটার স্কেলে কোনও ভূমিকম্পের মাপ এক, আর কোনও ভূমিকম্পের মাপ দুই এলে দ্বিতীয়টি প্রথমটির থেকে দশগুণ শক্তিশালী হবে। তেমনই কোনও ভূমিকম্পের মাপ তিন আসার অর্থ তা দ্বিতীয় ভূমিকম্পের থেকে দশগুণ এবং প্রথমটির থেকে ১০০ গুণ শক্তিশালী।

 
ভুমিকম্পের সময় আপনার আমার করনীয়
 
ভূমিকম্পের সময় উপদ্রুত এলাকাবাসীর করনীয়  ( এইঅংশটুকু সংগৃহীত)
সরকারী পদক্ষেপের বাইরে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদেরও কিছু বিষয় জানা থাকা প্রয়োজন। ভূমিকম্পের সময় মোটেই আতঙ্কিত হবেন না। এই দূর্যোগে রক্ষা পেতে সাধারণভাবে কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিন।
: নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন
ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব কয়েক সেকেণ্ড হতে সর্বোচ্চ মিনিটখানেক। এই সময়ে ঘরে অবস্থান করলে টেবিল বা ডেস্কের নিচে সপরিবারে অবস্থান নিন। আপনার মাথায় কোনকিছুর আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা পাবেন।

: গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা দ্রুত বন্ধ করুন
ভূমিকম্পের সময় আগুন লেগে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান অনেক বেড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে যত দ্রুত সম্ভব রান্না ঘরের গ্যাস, তেল বা ইলেক্ট্রিক চুলা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন যত ছোট ভূমিকম্পই হোক না কেন চুলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
: তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড় হবেন না
ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেড় হতে গেলে ভীড়ে চাপা পড়ে বা উপর হতে মাথায় কিছু পড়ে আহত হতে পারেন। এই জন্য তাড়াহুড়ো না করে ধীর স্থিরভাবে আশপাশ পর্যবেক্ষণ করে তারপর বাইরে বেড় হবার চেষ্টা করুন।
: দরজা খোলার ব্যবস্থা করুন
দালানে বসবাসকারীদের প্রধান সমস্যা হয় ভূমিকম্পের সময় দরজা আটকে বন্দী হয়ে যাওয়া। এইজন্য বাইরে যাবার দরজাটি খোলার ব্যবস্থা করুন।
: মাথা রক্ষা করুন
ভূমিকম্পের সময় বহুতল ভবন হতে বাইরে বেড় হবার সময় অনেকেই উপর হতে কোন কিছু পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে থাকেন। এটা এড়াতে বাইরে বেড় হবার সময় মাথার উপর শক্ত বোর্ড বা ট্রে জাতীয় কিছু ধরে রাখুন। এতে করে উপর থেকে কিছু পড়লেও আপনার মাথায় আঘাত লাগবে না। বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প হলে বালিশটি মাথার নীচ হতে মাথার ওপরে আনুন
৬ . সিনেমা হল বা ডিপার্টমেণ্টাল স্টোরের মত পাবলিক প্লেসে করনীয়
সিনেমা হল, অডিটোরিয়াম, ডিপার্টমেণ্টাল স্টোর, রেল স্টেশন বা এয়ারপোর্টের মত পাবলিক প্লেসে থাকলে সেখানে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী স্বেচ্ছাসেবকদের পরামর্শ অনুসরন করুন।
: গাড়ি বামদিকে পার্ক করুন
ভূমিকম্পের সময় আপনি যদি গাড়ি চালানো অবস্থায় থাকেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গাড়িটি রাস্তার বামপাশে পার্ক করুন। কোন অবস্থাতেই ভূমিকম্পের সময় গাড়ি চালাবেন না।


: পাহাড়ী রাস্তায় ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথর খেয়াল করুন
ভূমিকম্পের সময় আপনার গাড়িটি পাহাড়ী এলাকায় থাকলে ভূমিধ্বস এবং গড়িয়ে পড়া পাথরের আঘাত এড়াতে নিরাপদ স্থানে গাড়িটি পার্ক করুন।
: উপদ্রুত এলাকা ত্যাগ করতে হাটুন
ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকা হতে নিরাপদ এলাকায় সরে যাবার জন্য গাড়ি ব্যবহার করার চেয়ে পায়ে হাটা অনেক নিরাপদ।

১০: গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না
ভূমিকম্পের সময় গুজব বা ভুল তথ্যের কারনে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকে বিপদ ডেকে আনেন। এজন্য সঠিক তথ্য পেতে রেডিও/টিভির বুলেটিন শুনুন।

Comments

Popular posts from this blog

গড় বেতন ও অর্ধ গড় বেতন কাকে বলে এবং কীভাবে তা হিসাব করবেন।

নথিতে/অফিসিয়াল চিঠিতে ডিজিটাল স্মারক নং দেবার পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা

জনস্বার্থে বদলীকৃত সরকারি কর্মচারিদের প্রকৃত যোগদানকাল নির্নয় করবেন যেভাবে