সততা কী আসলে অদক্ষতা নাকি পুরাতন মানসিকতা ?
কতদিন আগে হবে আজ আর সেটা মনে নেই তবে লেখাটার সারমর্ম আমার পরিস্কার মনে আছে, এক ভদ্রলোক পত্রিকায় তার নিজের জীবনের অপ্রিয় সত্য তুলে ধরে একটি লেখা লিখেছিলেন । সংগত কারনেই তিনি তার নাম গোপন রেখেছিলেন । তার লেখাটার মুলকথা যেটা ছিল তা হলো তিনি তার সরকারি চাকুরী জীবনের শুরুতে অত্যন্ত সৎভাবে জীবন যাবন করতে চেয়েছিলেন ফলে আর্থিক সমস্যার কারনে তার পারিবারিক জীবনেও দূর্যোগনেমে আসে । কিন্তু তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত তৃপ্ত ছিলেন। অর্থের আধিক্য না থাকোতে তার কাছের লোক এমনকি তার পরিবারের স্ত্রী থেকে শুরু করে সন্তানেরা পর্যন্ত তাকে কখনই মুল্যায়ন করে নাই। তারা তার সাথে নাকি ভালভাবে কথা পর্যন্ত বলত না । তাদের কাছে তিনি ছিলেন অযোগ্য স্বামী , অসমর্থ পিতা । তারপর তিনি হটা্ৎই নিজেকে পরিবর্তন করেন। সম্পুর্ন অসৎ পথে আয় করতে শুরু করেন। রাতারাতি সব পাল্টে যায় । যারা কিনা কিছুদিন
আগেও তার সাথে ভালোভাবে কথা বলে নাই তারাই সবসময় তার খোজ নিতে শুরু করে। পরিবারের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন চরম যোগ্য আর অত্যন্ত সামর্থবান একজন বাবা। কিন্ত পরিবারের লোক কখনই জানতে চান নাই হটাৎ করে এত অর্থ আসছে কোাথা থেকে । তারা তাদের আরাম আয়েশের জন্য প্রয়োজনী রসদ পেয়েই অত্যন্ত খুশি। ভদ্রলোক তার পরিবারকে ছাড়তে পারতেন না তাই তাদের সন্তুষ্টির জন্য অসৎ পথটি বেছে নেন ঠিকই ক্নিতু আত্মগ্লানিতে নিজে শেষ হয়ে যাচ্ছিলেন । সে কারনেই পত্রিকাটিতে লেখাটা লিখেছিলেন। যদিও তিনি বলেছিলেন অসৎ হতে গিয়েও তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে ।
বহুদিন আগে বিটিভিতে একটা নাটক দেখেছিলাম , নাটকের নাম “চান মিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ”। নাট্যকারের নাম মনে নেই , মুল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হুমায়ূন ফরিদী যেখানে তার চরিত্রটি ছিল একজন পাকা চোরের। নাটকে দেখানো হয় চান মিয়া (হুমায়ূন ফরিদী) পরবর্তীতে চুরি ছেড়ে দিয়ে সম্পুর্ন ভালো মানুষ হবার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করতে চায় না। সকলেই তাকে তখনও সন্দেহ করতে থাকে, এমনকি এলাকায় কোন চুরির ঘটনা ঘটলেই সবাই চান মিয়াকেই ধরে নিয়ে আসে সে চুরি করেছে বলে। সকলেই তাকে এড়িয়ে চলে চোর সন্দেহে। উপরের উল্লেখিত ব্যাক্তিটির জীবনেও তেমনটি ঘটেছিল। তিনি যখন উৎকোচ নেবেন বলেন ঠিক করেছিলেন তখন কেউ সেটা বিশ্বাস করতে চায় নি, ভেবেছে তিনি মজা করছেন। আবার কাজের জন্য তেমন কেউ আসতও না কারন তাকে দিয়ে তো কাজ হবে না। সৎ ব্যাক্তি হতে অসৎ ব্যাক্তি বলে নিজেকে প্রমান করতেই তাকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কি চমৎকার টুইস্ট তাই না।
এবার আসি মুল কথায়, কেন এতগুলো ঘটানার অবতারনা করলাম? আমি নিজেও একজন চাকুরীজীবি আর এ বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা যা বলে তা হচ্ছ আপনি যদি সৎ পথে চলেন , সকল কিছু নিয়ম নীতির মধ্যে থেকে করতে চান তাহলে আপনি কোন কাজেরই না। আপনার অগোচরে আপানকে হয়ত ভালো লোক বলবে কিন্তু আপনার কাছে আসবে না। আপনাকে দিয়ে তার কাজ উদ্ধার হবার সম্ভাবনা খুব কম। আর যদি আপানর কাছে আসেও তখন আপনি তার কাজটি নিয়মের মধ্যে পরছে না বলে করে দিতে না পারেন তবে এক নিমিষেই আপনি তার কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠবেন। বর্তমান প্রেক্ষাপট বলে নিয়মের মধ্যে কাজ করাটা কোন দক্ষতার পরিচয় নয় কারন ওটাতো সবাই পারে, নিয়মের বাইরে গিয়ে ফাকফোকর খুজে বের করে যত প্রকার দুই নম্বরি আছে তা করে যদি আপনি কাজ করতে পারেন তবে দেখবেন আপনি অত্যন্ত দক্ষ বলে বিবেচিত হবেন। আপনার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষও দেখবেন আপানকে সময় সময় ডেকে পাঠাবেন আপনি ভাল পারেন বলে, কোন পথে সেটা বিবেচ্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন কেউ কোন সুপারিশ নিয়ে আসেে একটু
পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কাজটি নিয়মের মধ্যে পরে না বলেই ( সকল সময় তা বলছি না ) তিনি বিভিন্ন ব্যাক্তির সুপারিশ নিয়ে আসেন, আপনি যদি কাজটি করতে পারেন তাহলে আপনি ভালো সিস্টেম বের করা কর্মকর্তা । আপানকে দিয়ে কাজ হবে আর আপনার আশে পাশেও তখন সুখের মাছির অভাব হবে না । সবসময় আপানাকে ঘিরে লোকজন থাকবে, লোকজন ছুটে আসবে আপনার কাছে ,আপনিও আপনার চরম দক্ষতা দেখাতে পারবেন। সৎ হলে আপনার তো সিস্টেম বের করার
ক্ষমতাই নেই আপানর কাছে এসে লাভ কী। এটা কিন্তু শুধুমাত্র বাড়ির বাইরের জন্য প্রযোজ্য নয় , পরিবারেও আপানকে এ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে। আপনি যখন আপনার পরিবারের চাহিদা মতো যোগান দিতে পারবেন না,নতুন নতুন মডেলের স্মার্ট ফোন ,কাপড় গহনা দিতে পারবেন না তখন আপানকে শুনতে হবে সবাই পারলে তুমি পারবে না কেন। যারা বিভিন্ন কাজে তদবীর করে বেড়ায় তারা নিজেরাও জানে কাজটি নিয়মের মধ্যে পরে না, তবু তাদের কাজটা করা চাই। আর এখন যদি আপনি ভেবে থাকেন যেটা নিয়মে হচ্ছে না সেটা যদি আমাকে করতেই হয় তবে, বিনা পয়সায় কেন করব, তবে কি দোষ দেয়া যাবে। এরপরও তিনি যদি সেটা বিনা পয়সায় করেও দেন তবে তো তিনি আসলেও অদক্ষ , কারন তিনি সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে না । সুযোগ কাজে লাগানোটাই তো বড় দক্ষতা , তা সেটা যে প্রকারেই হোক না কেন। আসলে যারা অসৎ হন তারা কি নিজের ইচ্ছাতেই সব সময় হন না তাদেরকে সেবা গ্রহন করা ব্যাক্তি অসৎ করেন। আমার সন্দেহ আছে। একটা বিষয় ভেবে দেখুন তো আজ বাংলাদেশের একটা জায়গা দেখাতে পারবেন না যে অঞ্চলের লোকজন যানবহনে ( বাসে) সিগারেট খায়। এটা হটাৎ করে উঠে গেল কি করে। সকলেরই সচেতনতা আর প্রতিবাদের কারনেই কিন্তু এটা উঠে গেছে। আপনি ভুল কাজ করতে না দিলে আমাকেও তো ভুল কাজ করা লাগে না। তবু এটা বাংলাদেশ। নিজ নিজ স্বার্থে সকলেই চায় তার সুবিধা সেটা নিয়মে পড়ুক আর না পড়ুক, যারা নিয়মে চলার চেষ্টাকরেন তাদের পক্ষে এ কাজ গুলো কার সম্ভব হবে না , কাজেই তারা চিরকাল অদক্ষই থেকে যাবেন, নয়ত তারা যুগের সাথে সময়ের সাথে , পরিস্থিতির সাথে মানাতে পারছেন না বলে পুরানো মানসিকতার বলে বিবেচিত হবেন, হতে থাকবেন। সত্যের জয় একদিন হবেই, সতততার পুরস্কার একদিন পাবেন এ সকল কথা শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তকে্ই পাবেন, বাস্তব জীবনেও এগুলোও ব্যাকডেটেড। শুধু সততার কারনে বাংলাদেশে কেউ কখনও পুরস্কৃত হয়েছেন আমার অন্তত জানা নেই আপানদের জানা থাকলে জানাবেন নিজেকে সুধরে নেব।
Comments
Post a Comment