পোষাকই যদি যোগ্যতা হয় তবে পোষাকই চাই।
শেখ সাদীর সেই বিখ্যাত গল্পটি সম্ভবত সকলেরই মনে আছে, যেখানে পোষাকের কারনে তিনি দুবার দুরকম আচরন পেয়েছিলেন। মলিন পোষাকে শেখ সাদীর মত ব্যত্তিকেও কেউ যখন আপ্যায়ন করেন নাই, সেই তিনিই যখন জৌলুসপূর্ন পোষাক পড়ে আসেন তখন তার প্রতি মানুষের আগ্রহ, আপ্যায়ন বহুগুন বেড়ে যায়। শেখ সাদী তো একজন মহান কবি ছিলেন দার্শনিক ছিলেন, কিন্ত এখন কোন গুন থাকার দরকার পড়ে না, চাকচিক্য থাকলেই চলে। মাত্র কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে থেকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।উপজেলাটি অনেক বড়, ১৪৬ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গৃহীত হয়েছে। বড় উপজেলা হওয়াতে প্রিজাইডিং অফিসারও বেশি লেগেছে,উপজেলার নিজস্ব অফিসার কম হওয়াতে নীতিমালা অনুসরন করে বিভিন্ন বেঃ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, কলেজের শিক্ষকগনকে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব প্রদান করা হয় যাদের অনেকেই এবারই প্রথম দায়িত্ব পান। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বলিষ্ঠ ভুমিকা এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সুন্দর হয়েছে এতে কোন সন্দহ নেই।তবে এর পেছনে বড় একটি ভুমিকা রেখেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন এবং অবশ্যই উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ প্রয়োজনীয় সহযোগীতট প্রদানের মাধ্যমে।
ভোটের ফলফল গ্রহনের সময় আমি প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের ( বেঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রঃশি, কলেজের শিঃ) যে দক্ষতার প্রমান পেলাম তাতে দাবীর সাথে বলতে পারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকগন এর চেয়ে শতগুন ভালভাবে কাজটি করতে পারেবন।আমি খোজ নিয়ে দেখেছি প্রাথমিকের শিক্ষকগন ( যারা সহঃ প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন) তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে কাজটি সুন্দরভাবে করতে সহায়তা করেছেন। হয়ত বলবেন অনেকে প্রথমবার একটু সমস্যা হতেই পারে, তাহলে আমার প্রশ্ন যারা এই বিদ্যাটি ভাল বোঝেন, দায়িত্ব পালন করে অভিজ্ঞ হয়েৃছেন তারা পাবে না কেন। তার কারন পোষাক নেই, যদি প্রধান শিক্ষক সহঃ শিক্ষকদের পদমর্যাদা থাকত তবে তারাই এটা পেত। এদেশে বড়পদ মানেই দায়িত্ববান, ছোটপদমানেই দায়িত্বহীন তা আপনার যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক। আমি দাবী নিয়ে বলতে পারি এদেশে ভোটসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূণ কাজ ( ভোটার তালিকা হালনাগাদ,আদম সুমারী, টীকা ইত্যাদি) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগনকে ছাড়া কখনই সম্ভব হবে না। আমি জানি কেউই অপরিহার্য্য নয়।পিতা মারা গেলেও স্ত্রী সন্তানের জীবন যেমন থেমে থাকে না তেমনি সন্তান মারা গেলেও সে শোকও পিতামাতা কাটিয়ে ওঠেন, কিন্দু ছন্দ পতন নিশ্চই ঘটে জীবনে শৃঙ্খলাতো নষ্ট হয়।সাধারন কাজটিও অনেক বেশী কঠিন হয়ে পরে।
ভোটের যে চিত্রর কথা বললাম তা কিন্ত সারা বাংলাদেশরই। ছাগল দিয়ে যেমন হাল চাষ হয় না তেমন বাঘ দিয়েও হাল চাষ সম্ভব না। যার যেখানে মানায় তার সেখানেই থাকা উচিৎ।
ভোটের দিন যখন কন্ট্রলরুমে বসে ফলাফল আসার অপেক্ষায় ছিলাম তখন পাশে তাকিয়ে দেখি প্রায় সকল রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে একজন করে সহঃ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সহযোগী হিসাবে আছেন।মনে হল কতভাবেই না এরা এদের যোগ্যতার প্রমান রেখে চলেছে। ট্যাগ অফিসার, পরীক্ষার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চাল বিতরন, রিলিফ বিতরন আর অনেক কাজ আছে যা এরা সফলতার সাথে পালন করছে, নিজ দপ্তরের কাজের হিসাবতো দেয়াই সম্ভব না।আমার জানামতে কাউকে কাউকে ভারপ্রাপ্ত ইউনিয়ন, পরিষদে্র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আর সেটা তারা সফল ভাবেই পালন করছে।এ কাজগুলো কিন্ত চেয়ে বা অনুগ্রহে পাওয়া কোন কাজ নয় যোগ্যতার বিচারেই উপজেলা প্রশাসন থেকে দায়িত্বগুলো দেয়া হয়।
সত্য বলতে কি এখন দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের শিক্ষক কর্মতর্তাদের প্রত্যক্ষ ৃভুমিকা থাকে। কিন্ত এই বিভাগের শিক্ষক কর্মকর্তাদেরই কোন পোষাক নেই, অথচ সকল মর্যাদাবান কর্মকর্তা যাদের সকলের পোষাক আছে তাদের সকলের জীবনের শিক্ষার শুরু প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে।একজন প্রধান শিক্ষক ৩০/৩৫ বছর একই পদে চাকুরী করবেন বা একজন সহঃ উপজেলা শিক্ষা অফিসার ২৫/২৬ বছর একই পদে চাকুরী করে জীবন শেষ করবেন ভাবা যায়। আদৌ তার মর্যাদা বাড়বে কিনা তার জানা নেই, কোন বিভাগীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, যোগ্যতার প্রমান রেখেও কোন লাভ নেই তাহলে চাকুরীর প্রেষনা কোথায়। চাকুরীতে প্রেষনা না থাকলে কখনই কাজ ভাল পাবার আশা করা যায় না। এখানেও আমরা ব্যতিক্রম, প্রেষনা নেই, তবু কাজ করছি, করে যাব, তবে পোষাক নিশ্চই চাই।
কেউ কেউ হয়ত বলবেন আপনি তো জেনে শুনেই এখানে এসেছেন, না এটাও ঠিক না, বাইর থেকে কখনই কোন কিছু র পুরোটা দেখা যায় না, দেখতে হলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।আবার অনেকে বলবেন যোগ্যতা থাকলে যেখানে পোষাক আছে সেখানে যান,এ কথাটাই তো বলতে চাচ্ছি যোগ্যতাতেই সব হলে তো কথাই থাকে না। সম্প্রতি আমার এ সহকর্মী বি,সি,এস দিয়ে এ এস পি হয়েছেন।উনি কি যোগ্য না।যতদিন আমাদের সাথে আছেন ততদিন অযোগ্য যেদিন ঐ চকুরীতে যাবেন সেদিন হতে যোগ্য? সম্প্রতি একজন যোগদান করেছেন যিনি রুয়েট হতে টেলিকমিউনিকেশন থেকে পাশ করেছেন।জিজ্ঞেস করলাম এখানে এলেন কেন, বললেন খারাপ কি। দুবার বিসিএস ভাইভা দিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ভাইভা দিয়েছেন। চাকুরী হয়নি।বললাম যোগাযোগ করেননি, কথার ধরনেই বুঝলাম আমার মতই না ওচা, ততবিরে চাকুরী করতে চান না। বিদেশে চেষ্টা করতে বললাম, জানালেন সুযোগ ছিল কিন্ত যেতে চান না।এখন এখানে এসেছেন বলেই অযোগ্য।আমার শিক্ষক পারিবারিক কারেন বেসরকরি ব্যাংকের ভাল বেতনের চাকুরী ছেরে প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষকতা করছেন। উনিও তাহলে অযোগ্য।এরকম শত শত উদাহর দিতে পারব যোগ্যতার অভাবে নয় পরিস্থিতি আর কাজকে ভালবেসে অনেকই এখানে আছেন।সরকারের আর্থিক ক্ষতি না করেও মর্যাদা বাড়ান যায়, তার বড় প্রমান সরকারি হাই স্কুলের সহঃ শিক্ষকগনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন।৮ বছর পর ৫০% প্রমোশনে্ পদন্নতি।আসলে আমাদের নামের সামনে প্রাথমিক আছে তো তাই সকল কিছুতেই প্রাথমিক অবস্থায় রাখতেই বোধহয় সকলে সচেষ্ট।কিন্ত আমি পোষাক চাইবই তা আপনি যাই বলেন না কেন।আমার পোষাক চাই।
Comments
Post a Comment