সকালে মোরগ ডাকে কেন ?


ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে মোরগের ডাকে কখনও কখনও আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। আমরা তখন বুঝি ওটা ঊষালগ্ন। সকাল হতে আর দেরি নেই। কিন্তু মোরগ কি করে বুঝতে পারে সময়টা ঊষা? কিভাবে তা টের পেয়ে গলা ফাটিয়ে জানান দেয় যে, ভোরের আলো ফুটল বলে? সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় জানা গেছে যে, ভোর এসেছে বোঝার জন্য মোরগের আলো দেখার দরকার হয় না। তাদের দেহঘড়িই সময় সম্পর্কে সজাগ করে দেয়।
ভোরবেলায় মোরগের গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠাকে আমরা বলি মোরগের ডাক দেয়া। এর পেছনে যে জৈবঘড়ি বা দেহঘড়ির সংশ্লিষ্টতা আছে তা অবশ্য কেউ পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করে দেখাতে পারেননি। তবে জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবঘড়ি বিশেষজ্ঞ তাকাশি ইউশিমুরা ও তাঁর সহকর্মী শুয়োশি শিমুরা এক পরীক্ষায় দেখিয়েছেন যে এই ডাক দেয়ার সঙ্গে একটা জিনগত যোগসূত্র আছে।
এই পরীক্ষার জন্য তারা একজাতের মোরগ বেছে নেন যেগুলো জিনগত সাদৃশ্যের কারণে গবেষণাগারে প্রায়শই ব্যবহৃত হয়। এই মোরগগুলো দুই ভাগে ভাগ করে দুই ভিন্ন আলোর ব্যবস্থায় রাখা হয়। প্রথম গ্রুপটিকে ১২ ঘণ্টা আলোয় এবং ১২ ঘণ্টা ফিকে আলোয় ১৪ দিন রাখা হয়। গোটা সময় গবেষকদ্বয় লক্ষ্য করেন যে, মোরগরা দিনের আলো ফুটে ওঠার ২ ঘণ্টা আগে বাগ দিতে শুরু করেছে। এ হলো ঊষার আগমণ ধারণা করে ডাক দেয়া। বনমোরগের ক্ষেত্রেও একই আচরণ লক্ষ্য করা যায়। তারা ঊষার সময় চিৎকার দিয়ে ওঠে।
দ্বিতীয় গ্রুপটিকে ১৪ দিন ধরে ফিকে আলোয় সর্বক্ষণ তথা ২৪ ঘণ্টা রাখা হয়। এক্ষেত্রে গবেষকদ্বয় লক্ষ্য করেছেন যেÑ এই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মোরগরা প্রায় পৌনে চব্বিশ ঘণ্টাই জেগে থেকেছে এবং যখন ভোর হয়েছে বলে তাদের মনে হয়েছে তখন ডেকে উঠেছে।
মোরগের ডাক দেয়ার ব্যাপারে বাইরের কোন সূত্র প্রভাব রাখে কিনা দেখার জন্য গবেষকরা এই মোরগগুলোকে শব্দ ও আলোর দ্বারা উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করেন এবং লক্ষ্য করেন; এরা দিনের অন্য সময়ের চেয়ে সকালের দিকেই আলো ও শব্দের দ্বারা বেশি উদ্দীপ্ত হয় এবং ডাক দিয়ে ওঠে। এর অর্থ হলো, বাইরের শক্তিগুলো তাদেরকে যতটা প্রভাবিত করে তার চেয়ে অভ্যন্তরীণ দেহঘড়ি বা জৈবঘড়িই তাদের প্রভাবিত করে বেশি।
গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেছেন যে সব মোরগ একসঙ্গে ডাক দেয় না। কোনটা আগে দেয়, কোনটা পরে। এক্ষেত্রে মোরগদের মধ্যে সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটা ভূমিকা আছে। ডাক দেয়াটা একটা হুঁশিয়ারি সংকেত, যার মাধ্যমে জানা দেয়া হয় যে, এই তল্লাট আমার। সামাজিক স্তরবিন্যাসে যে মোরগের অবস্থান সবার ওপর সেই প্রথম ডাক দিয়ে উঠে ভোরের নৈঃশব্দকে ভেঙ্গে দেয়ার অগ্রধিকার পায়। সামাজিক স্তরবিন্যাসে যাদের অবস্থান নীচে তারা পরে ডাক দেয়। এই ব্যাপারটি প্রতিদিন সকালেই ঘটে।
মোরগের ডাক দেয়ার একটা অর্থ হচ্ছেÑনিজ তল্লাটের সার্বভৌমত্ব দাবি করা। তাকে একসঙ্গে বেশ ক’টা ডিমপাড়া মুরগির পালের দেখাশোনা করতে হয়। ডাক দিয়ে সে তার উপস্থিতি জানান দেয় এবং বলে দেয় এই তল্লাটে কেউ এসো না। মোরগ সাধারণত চারমাস বয়স হবার আগে ডাক দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। ভোরবেলা ছাড়াও তারা অনেক সময় দিনেরবেলাতেও ডাক দেয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, প্রায় ৪ হাজার বছর আগে মোরগ-মুরগি মানুষের পোষ মেনে গৃহপালিত হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় তাদের ডেকে ওঠার ব্যাপারটা জিনগতভাবে প্রোগ্রাম করা। এটাই তাদের জৈবিক ঘড়ি বা দেহঘড়ি হিসেবে কাজ করে।

সূত্র: এ্যানিমেল সায়েন্স

Comments

  1. স্যার, আপনি মুরগের ডাকার ব্যাপারে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক নয় স্যার!! হাদিসে এসেছে, মুরগ ডাকে হলো,আল্লাহর ফেরেস্তাদের দেখে..

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

গড় বেতন ও অর্ধ গড় বেতন কাকে বলে এবং কীভাবে তা হিসাব করবেন।

নথিতে/অফিসিয়াল চিঠিতে ডিজিটাল স্মারক নং দেবার পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা

জনস্বার্থে বদলীকৃত সরকারি কর্মচারিদের প্রকৃত যোগদানকাল নির্নয় করবেন যেভাবে