বঙ্গবন্ধুর ছবি ও একটি আমন্ত্রন পত্র



কোনএক  সিংহের রাজ্যে গাধা আর শিয়ালের মধ্যে ঘাসের রং নিয়ে তুমুল তর্ক শুরু হয়ে গেল। গাধা বলে ঘাসের রং হলুদ আর শিয়াল বলে ঘাস সবুজ। দুজনেই তাদের কথায় অনর, কেউ তাদের বক্তব্য হতে একচুলও নরতে রাজি নয়। কিছুতেই যখন সমাধান হচ্ছে না তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলো সিংহের কাছে এর বিচার চাইবে। সেই মত তারা সিংহের কাছে গেলো। সব শুনে সিংহ গাধাকে মুক্তি দিলো আর শিয়ালকে জেলে পাঠালো। শিয়াল অবাক হলেও বিচার মেনে নিলো। তবে সে সিংহকে জিজ্ঞাসা করলো হুজুর বিচার ঠিক আছে কিন্ত আমাকে বলেন ঘাস কি সবুজ না? সিংহ বলল, নিশ্চই ঘাস সবুজ, কিন্ত আমি তোকে এই জন্য জেলে দিই নি, আমি তোকে জেলে দিয়েছি কারন তুই গাধার সাথে তর্ক করেছিস।
ক্লাস ফাইভের একটি ছাত্রের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে বরগুনার সদর উপজেলার  ইউএনও সাহেব আমন্ত্রন পত্র বানানোতো তার বিরুদ্ধে মামলা এবং পরবর্তীতে গ্রেফতারের যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা পড়ে প্রথমেই  আমার উপরের গল্পটাই মনে পড়েছিল। যে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি আসলে সিংহের মতোই  বিচার করেছেন ( বিচারক সম্পর্কে অন্য কিছু আমি ভাবতে চাই না বা ভাববার সাহস আমার নেই)। কারন অসংখ্য গাধায় পরিপুর্ন এদেশে, তারিক সালমানের মতো একজন সৃষ্টিশীল,  প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত সরকারি কর্মকর্তা কেন বঙ্গবন্ধুকে ভিন্নতর পদ্ধতিতে সম্মানিত করতে চাইবেন এবং একই সঙ্গে শিশুদের উৎসাহিত করবেন। তাদের সুন্দর কাজের মূল্যায়ন করবেন? কে তাকে এতটা সৃজনশীল হতে বলেছে? বিচারক  তো ঠিক কাজই করেছেন।
ফেসবুকে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে আপনি যতই চিৎকার করেন না কেনো বা যতই সুন্দর যুক্তি দেখান না কেনো এরা গাধার মতো কখনই প্রকৃত সত্যটা বুঝবে না বা বুঝতে চাইবে না। কোনটা অবমাননা আর কোনটা সম্মান করা এটাইতো এরা বোঝে না।আমার ধারনা যে, যিনি এই মামলাটি করেছিলেন তিনি এখনও তার অবস্থানে অনর হয়ত নিজেকে বাচানোর জন্য কিছু হাতুরে যুক্তি খুজছেন।
তবে খুবই ভালো লাগলো আজ, যখন দেখলাম এই খবরটি দেখে নাকি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বিস্মিত হয়েছেন এবং ইউএনও মহোদয় পুরস্কার যোগ্য কাজ করেছেন বলে মত দিয়েছেন। একই সঙ্গে দোষীদের বিষয়ে খোজ খবর করছেন।আমি তো বলব পরবর্তী কোন একটি জাতীয় দিবসে এই ছবিটি ব্যবহার করেই সারা দেশে আমন্ত্রন পত্র বানানো হোক তাহলেই ইউএনও  মহোদয়কে প্রকৃত পুরস্কৃত করা হবে। অথবা হতে পারে উনার চিন্তাধারাকে গ্রহণ করা। আর তা না হলে বার বার এমন হতে থাকলে মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করা বা সম্মান করার বদলে ভয় পেতে থাকবে।ভয় আর শ্রদ্ধা কিন্ত এক বিষয় না।সত্যি বলতে আমরা যারা সরকারি চাকুরি করি তারা যে কোন রাষ্ট্রীয় প্রগ্রামে যেখানে বঙ্গবন্ধুর ছবি বা নাম ব্যবহার করি তখন গভীর শ্রদ্ধাভরেই সেটা করি এবং করবো। কারন জাতির পিতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর অবদান  অস্বীকার বা তাকে অসম্মান করার ধৃষ্টতা আমাদের কাররই দেখানো উচিৎ না। তবু সবসময় একটা ভয় হয় অসতর্কতায় বা অনিচ্ছায় কখন কোন ভুল করে ফেলি, পাছে না আবার কে কোথা হতে না বুঝেই মামলা করে বসে আর তার ফল ভোগ করতে হয়। যদিও কোনধরনের ভুল না হওয়াই শ্রেয়।ভুলের ভয় করে কাজ করতে গেলে বরং ভুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
প্রথমে বলা গল্পটা এবার একটু অন্যভাবে বলি।
ঐ একই রাজ্যে ছাগল আর গরুর মধ্যে ঘাসের রং নিয়ে তর্ক  বেধে গেলো।  ছাগল বলে ঘাস কালো গরু বলে সবুজ। তর্ক যখন থামছেই না তখন তারা গেলো সিংহের কাছে।  সিংহ তখন বাড়িতে ছিল না। সেখানে ছিল একটা বানর যে কিনা সেই শিয়ালটাকে পাহাড়া দিচ্ছিলো যাকে সিংহ জেলে পাঠিয়েছিল।একই সঙ্গে বানর ছিল
সিংহের প্রিয়পাত্র। ছাগল আর গরু তখন বানরের কাছেই বিচার দিলো। বানর সব শুনে বলল রায় পেতে হলে বিচারের ফী দিতে হবে এটা সিংহরাজের নির্দেশ। ছাগল জানতে চাইল ফী কি,  বানর বলল এককাদি পাকা কলা। রায় নিজের পক্ষে পাওয়ার জন্য ছাগল আর গরু দুজনেই ছুটল কলা আনতে। দুজনেই যখন কলা নিয়ে ফিরলো তখন সেগুলো রেখে বানর রায় শোনালো। বানর গরুকে জেলে আর ছাগলকে মুক্তি দিলো।
এতক্ষন সেই শিয়াল সব দেখছিল, সে বানরকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা বানর সত্যি করে বলতো ঘাসের রং কি? বানর বলল সবুজ। শিয়াল অবাক হয়ে বলল, তবে তুমি গরুকে জেলে পাঠালে কেন? আর সেদিন গাধা জেনে গেল ঘাস  হলুদ আজ ছাগল জানলো ঘাস কালো,  তাহলে বাকিরা কি জানবে?
বানর হেসে বলল, এখানেই আমি আমার রাজাকে অনুসরন করেছি, সিংহ তাকেই  জেলে দিয়েছিল যে ঘাসকে সবুজ বলেছিল, আমিও তাই করেছি, রাজা খুশি।আর যতদিন ঘাসের রং কী এটা সবাই না বুঝবে ততদিন তর্ক চলতে থাকবে আর ওরা আমার কাছে বিচার চাইতে আসবে আমার বসে বসে কলা খাওয়া হবে, আমি খুশি।
এবার শিয়াল বলল, যদি গাধা আর ছাগল একসাথে আসে?
বানর বলল, তাহলে  যে বিষয়ে একবার রায় দেয়া হয়েছে সে বিষয় নিয়ে আবার তর্ক করার অপরাধে দুটোকেই জেলে পাঠাব

Comments

Popular posts from this blog

গড় বেতন ও অর্ধ গড় বেতন কাকে বলে এবং কীভাবে তা হিসাব করবেন।

নথিতে/অফিসিয়াল চিঠিতে ডিজিটাল স্মারক নং দেবার পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা

জনস্বার্থে বদলীকৃত সরকারি কর্মচারিদের প্রকৃত যোগদানকাল নির্নয় করবেন যেভাবে