ব্ল্যাক ডেথ ইউরোপে প্রথম কোয়ারেন্টাইন ধারণার চর্চা শুরু এবং ইসলামের প্রথম কোয়ারেন্টাইন ধারণার প্রবর্তন



করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান সময়ে কোয়ারেন্টাইন এবং আইসোলেশন শব্দদুটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, ইতিহাসে প্রথম কোয়ারেন্টাইন এর ধারণা দেন ইসলাম ধর্মের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আজ হতে চৌদ্দশ বছর আগে। যা মার্কিন গবেষক ড. কন্সিডাইন তার গবেষণায় প্রমাণ করেছেন। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন শব্দটির ব্যাপক প্রচলন ও চর্চা শুরু হয় ১৩০০সাথে সালে ইউরোপে যখন ব্ল্যাক ডেথ নামক মহামারী ইউরোপ হতে এশিয়া পর্যন্ত তার করাল থাবা বসিয়েছিল। আজ এখানে সে আলোচোনাই করব।

ব্ল্যাক ডেথ কী?


প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হতো ব্ল্যাক ডেথ ছিল বুবোনিক প্লেগের ( ইয়ারসিনিয়া পেস্টিস, ইঁদুরদের একটি ফ্লাই-বাহিত ব্যাকটিরিয়া রোগ যা মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়ে) একটি ধ্বংসাত্মক বৈশ্বিক মহামারী রুপ। যা ১৩০০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপ এবং এশিয়াতে আঘাত করেছিল। প্লেগটি ১৩৪৭ সালের অক্টোবরে ইউরোপে পৌঁছেছিল, যখন কৃষ্ণ সাগরের ১২ টি জাহাজ মেসিনার সিসিলিয়ান বন্দরে এসে পৌছায়।। সেদিন ডকে জড়ো হওয়া লোকজন এক ভয়াবহ ও বিশ্বয়কর ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকেন। জাহাজে চড়ে আসা বেশিরভাগ নাবিক মারা গিয়েছিলেন এবং তখনও যারা বেঁচে ছিলেন তারা মারাত্মক অসুস্থ এবং কালো ফোড়ায় ঢাকা পড়েছিলেন যা রক্ত ​​এবং পুঁজে ভরে ছিল। সিসিলিয়ান কর্তৃপক্ষগুলি তড়িঘড়ি করে "জাহাজ" বহরটিকে বন্দরের বাইরে রাখার আদেশ দিয়েছিল, কিন্ত ততক্ষনে অনেক দেরি হয়ে যায়। পরবর্তী পাঁচ বছরে ব্ল্যাক ডেথ, ইউরোপের ২০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে মেরে ফেলে। যা এই মহাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। প্রকৃতপক্ষে, ১৩৪০ এর দশকের গোড়ার দিকে, এই রোগটি চীন, ভারত, পার্সিয়া, সিরিয়া এবং মিশরে ছড়িয়ে পড়েছিল। সুত্র history.com


ব্ল্যাক ডেথ কি সত্যি বুবোনিক প্লেগ?

স্কট ও ডানকান নামের দুজন বিজ্ঞানী ২০১১ সালে কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেসে তাদের একটি রিপোর্টে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে,ব্ল্যাক ডেথ এর লক্ষণ ও বিস্তারের সঙ্গে বুবনিক প্লেগ এর তেমন কোন মিল নেই। সে আলোচনা এখানে আনতে গেলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে যা পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে পারে বিধায় সেটি এখানে তুলে ধরা হচ্ছে না । বরং স্কট এবং ডানকান ইবোলার মতো একটি হেমোর্র্যাজিক ফিলোভাইরাসকে এর জন্য দায়ী বলে দাবী করেন।যেহেতু এই রোগে রক্তপাত হয় তাই তারা মনে করেন "রক্তক্ষরণী প্লেগ" রোগটির জন্য একটি ভাল নাম হতে পারে। প্রাচীন মহামারীর জন্য তারাই প্রথম ইবোলাকে দায়ী করেন না। সান দিয়েগোতেও বিজ্ঞানী ও ক্লাসিস্টরা ১৯৯৬ সালে রিপোর্ট করেছিলেন যে, থুসিডাইডস দ্বারা বর্ণিত খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ এর আশেপাশে অ্যাথেন্সে যে প্লেগের বিস্তার ঘটেছিল তার লক্ষণগুলির সাথে ইবোলার মোটামুটি মিল রয়েছে। তা ছাড়া, সেই প্লেগের অনেকগুলি লক্ষণ- ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিনোপলে ছড়িয়ে পড়া ব্ল্যাক ডেথের মতোই ছিল। অবশ্যই, আমরা যে ফাইলোভাইরাসগুলি সম্পর্কে জানি সেগুলি এক সপ্তাহ বা তারও কম সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সুত্র. NewScientist.



কীভাবে ব্ল্যাক ডেথের অবসান হল এবং কোয়ারেন্টাইন চর্চা শুরু।

এই মহামারীটি সত্যই কখনও শেষ হয়নি এবং ৮০০ বছর পরে এটি আবার ফিরে এসেছিল। তবে ভেনিস-নিয়ন্ত্রিত বন্দর নগরী রাগুসার কর্মকর্তারা নাবিকদের আগমনকে বিচ্ছিন্ন রেখে এই বিস্তারটি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল।এই রোগের বিস্তারকে ধীর করতে বিচ্ছিন্নতার উপর নির্ভর করে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে। নাবিকদের প্রথমে তাদের জাহাজে ৩০ দিনের জন্য রাখা হয়েছিল (এটিকে ট্রেন্টিনো বলে ), পরে এ সময় কাল ৪০ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছিল কোয়ারানটাইন" শব্দের উৎস quarantine যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
 

তবে ইসলাম ধর্মের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) মহামারির সময় মানুষের করণীয় সম্পর্কে বলেন, " কোন এলাকায় তোমরা মহামারির সংবাদ শ্রবণ করলে সেখানে প্রবেশ করবে না। আর কোন এলাকায় থাকা অবস্থায় যদি মহামারি শুরু হয়, তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না। ( বুখারী হা-৫২৮৭ ও মুসলিম হা-৪১১১)।

হযরত মুহাম্মদ (সা:)আরো বলেন, " যে কোন ব্যক্তি মহামারির সময় নিজেকে ঘরে রুদ্ধ রাখবে ধৈর্য্য সহকারে, সওয়াবের আশায় এবং এই বিশ্বাস নিয়ে যে, আল্লাহ তার ভাগ্যে যা লিখেছেন এর বাইরে কিছুই ঘটবে না, - সে শহীদের মর্যাদা ও বিনিময় লাভ করবে। "
ধারনা করা হয় এটাই ইতিহাসের প্রথম কোয়ারেন্টাইন এর ধারনা।

Comments

Popular posts from this blog

গড় বেতন ও অর্ধ গড় বেতন কাকে বলে এবং কীভাবে তা হিসাব করবেন।

নথিতে/অফিসিয়াল চিঠিতে ডিজিটাল স্মারক নং দেবার পদ্ধতি ও ব্যাখ্যা

জনস্বার্থে বদলীকৃত সরকারি কর্মচারিদের প্রকৃত যোগদানকাল নির্নয় করবেন যেভাবে