লকডাউন ও একজন নাজিম
দৃশ্য -১
রাস্তার একটি চায়ের দোকান। চা সিগারেট খেতে খেতে কিছু লোক গল্পে মশগুল। নাজিম পত্রিকা হতে মুখ তুলে একজনকে উদ্দেশ্য করে বলে-
কাক্কু দ্যাখছ! হালার পো হালা সরকারে কামডা করতেয়াছে কি?
ক্যান সরকার কি তোর ইয়ের মইদ্যে চিমটি দ্যাছে?
দুর কাক্কু, আমনে খালি ফাউল হরেন।মুই কি হে কতা কইতেয়াছি। মুই কইতেয়াছি করোনার কথা। দেহেন হগ্গল দ্যাশ লক ডাউন মারতেছে আর মোগো দ্যাশে ব্যাবাক খুইল্লা রাখছে।করোনা যখন ধরবোহানে ব্যাবাকতে ভ্যাটকাইয়া পরবেয়ানে।আমাগোরও এহনি লক ডাউন মারতে হইবে। নাইলে সব মইরা ভুত। হালার চোরের দ্যাশে বাস করি।
নাজিমের কথাতে তর্ক বিতর্ক বেড়ে যায়।অধিকাংশই অতি জ্ঞানী। সরকারের ভুল পদক্ষেপে মহা চিন্তিত তারা। আসলেই লক ডাউন করা উচিত এমন মতের সংখ্যাই বেশি। দোকানদার বিরক্ত হয়।একটা বাচ্চা ছেলে এসে নাজিমকে বলে-
নাজিম ভাই, চাচি তোমারে বিছরাইতাছে। ছ্যাৎ কইরা বাড়ি যাও।
এমন জমজমাট আড্ডা হতে যেতে মন না চাইলেও নাজিম উঠে যায়।
দুদিন পর। নাজিম ভোর বেলা চায়ের দোকানের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়।চারিদিকে শুনসান নীরবতা। রাস্তার কুকুর গুলোও যেন উধাও হয়ে গেছে।অন্যদিন এ সময় দোকান সব খুলে যায়। লোকজনও চলাচল করতে শুরু করে।আজ সব বন্ধ।নাজিমের মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে যায়। দোকানদারকে দেখেই চিৎকার করে ওঠে
এই খারা খারা।
বোলাও ক্যান?
কামডা করছ কি অ্যা। দোকানও যে লকডাউন মারছ। দোকান খোল। সিগারেট টানতে হবে।
দোকান খোলা যাইব না। হোগায় বারি দেবেয়ানে।
দুর ব্যাটা লক ডাউন মানে কি ব্যাবাকতা বন্ধ থাকবো নাকি। মাইনষের কাম কাজ নাই নাকি।
ক্যান হেইদিন না তুমি খুব লক ডাউন মারতাছিলা। অহন আৎকা হইলোডা কি?
আরে.... বোঝে না। সময়মত কাম না হরলে অহন কাম হইবে। দোকানডা খোল মনু। সিগারেট না টানলে মোর বাথরুম হইবে না।
অসস্তিকর একটা ভঙ্গি করে নাজিম।দোকানদার হালকা একটু পাল্লা খুলে একটা সিগারেট দেয়।নাজিম সিগারেট নিয়ে বাড়ির দিকে চলে যায়।
বিকাল বেলা নাজিম আর দুজন ছেলে আর নাজিম বাড়ির সামনে দাড়িয়ে গল্প করছে।
আরে ব্যাটা দুরে খারাইছস ক্যান। কাছে না আসলে কথা কইয়া মজা নাই। হাত ধরে কাছে টানে নাজিম। একজন একঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয়।
কিরে অমন বাইম মাছের লাহান হরলি ক্যান।
তুমি না হেইদিন হুনাইলা অহন টাচ করা যাইবে না।
আরে দাদু এইগুলা একটু বাড়াইয়া লেহে।ো কাম নাই বোঝছ না। ডর দেহায় আর কি।হোন এই যে আৎকা সব লক মারল। গরীবরা চলব ক্যামনে। হেগো টাহা পয়সা না দিলে হইবে? এগুলা ব্যবস্থা হরন লাগবো না?হালা চোট্টা হোনেকার।
আরে এত মানুষরে খাইবো ক্যামনে। টাহা পাইবো কই।বয়াইয়া খাওয়াইবো নাকি।
টাহা কোন ব্যাপার না। বহুত টাহা আছে। না থাকলে বড়লোকগুলারে বলুক, দিব। মাইনষে এত খারাপ না। আমিও দিব। আসল কথা হচ্ছে কাম না কইরা বইসা বাদাম খাইলে তো হবে না।এগুলো ওয়ান টু এর কাম।
খারাও একটু পর আইতেয়াছি।
ছেলে দুজন কোথায় যেন যায়।
কিছুক্ষন পর।সেই দুজন ছেলে আর নাজিম আবারও বাড়ির সামনে।
নাজিম ভাই সরকার শুনলাম গরীবগো জন্য ফান্ড বানাইতেছে। সবাইরে সাহায্য করতে অনুরোধ করছে।ইউএনও স্যারের নির্দেশে আমরা চেয়ারম্যান সাহেবের লগে কথা বইল্লা তোমার কাছে আইলাম। তুমি না দিবা বলছিলা।
আরে হালার পো হালা। আমারে কি পাঠা পাইছ? পাগলা কুত্তায় কামড় দেছে।এগুলা টাহা চুরির নতুন ফন্দি। হালার চেয়ারম্যানতো ব্যাডাতো চুর।আমার টাহার দরকারডা কি। হ্যার গম চুরির টাহা দিতে ক।সরকারের হাজার হাজার চুরির টাহা আছে সেইডা দিলেই তো খাইবো ক্যাডা!নতুন ধান্দা বাধাইছে। তোরা ভুলেও এগুলাত যাস না।পাবলিকে পিটাইয়া মাইরা ফালাইবো।
দ্বীতিয় একটি ছেলে এবার কথা বলে। স্পষ্ট ভাষায় সুন্দর করে বলে
আমরা জানতাম আপনি দেবেন না। তবু নিশ্চিত হয়ে গেলাম। আপনাদের মত কাজ ছেড়ে বড় বড় কথা বলা মানুষদের জন্যই কিছু হয় না। নিজের সতর্কতাটুকুও নেন নি। সরকার এই করছে না ওই করছে না।এটা করা উচিত ওটা করতে হবে এসব না বলে নিজে কি করছেন সেটা তো একবার ভাবতে পারেন। কিছু না পারেন ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকলেও তো অনেক বড় কাজ করা হয় এটুকুও তো বোঝেন না দেখছি।
ও...মোর খোদা। এ হালা তো দেখছি সরকারের আস্ত দালাল।
কথা বলা বৃথা জেনে ছেলে দুজন নিজেদের কাজে চলে যায়।
খেয়াল করলে দেখবেন আজকাল এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। যারা অন্যের দোষ ধরা নিয়েই ব্যাস্ত। কিছু করতে হবে না। সরকারের নির্দেশ মেনে বাড়ি থাকুন। আপনি হয়ত বুঝতেও পারবেন না, আপনি কত বড় কাজটি করলেন, কত মানুষের জীবন বাচালেন। আনিসুল হক স্যারের লেখা হতে জানলাম এক মহিলা তার স্বামীর পচা গলা মৃতদেহ আর ছোট ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে দুদিন বাড়িত আটকে ছিল। লাশ সরানোর লোকও পায় নি। সেদিন আমাদের আসতে খুব দেরী নেই।
Comments
Post a Comment